আপনার শিশুকে ভালো এবং মন্দ স্পর্শ সম্পর্কে শেখান
Baby care product in bangladesh

বর্তমানে সামাজিক সমস্যাগুলোর মাঝে অন্যতম উদ্বেগজনক এবং ভয়ংকর সমস্যাটি হচ্ছে শিশু যৌন নির্যাতন। শিশুরা কিছু বুঝতে শেখার আগেই অনেক সময় তাদের উপর পড়ে এই কালো থাবা, যা একটি শিশুর সুন্দর শৈশব এবং কৈশোরকে একদম ধ্বংস করে দিতে পারে। তার স্বাভাবিকতা এবং সুন্দর বেড়ে ওঠাকে থামিয়ে দিতে পারে। এ ধরনের ঘটনার প্রভাব একটি শিশুর জীবনে দীর্ঘমেয়াদীভাবে থাকে।

তারা মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, অনেকে সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার মতো মারাত্মক পথও অনেক সময় বেছে নেয়। আবার অনেকক্ষেত্রে শিশুরা বুঝতেও পারে না, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাথে এই অত্যাচারগুলো চলতেই থাকে। অনেক সময় বুঝতে পারলেও তারা এক্ষেত্রে নিজেদেরকে দোষী মনে করে থাকে, খারাপ মনে করে থাকে। ভয়ে তারা কথাগুলো কাউকে খুলে বলতে পারে না।

বাংলাদেশে যৌনতা বিষয়টিকে কঠিন ট্যাবু হিসেবে দেখা হয়। তার উপর আমাদের দেশে বাবা-মায়েদের সাথে সন্তানদের সহজ-সরল সম্পর্ক খুব কমই দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বাবা-মা এবং সন্তানদের মাঝে একটি অদৃশ্য দেয়াল কাজ করে। ছেলে-মেয়েরা মন খুলে তাদের মা-বাবার সাথে কথা বলতে পারে না। তার উপর যদি আসে যৌনতার বিষয়, তাহলে তো আর কথাই নেই।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একটি শিশুকে তার বয়ঃসন্ধিকাল আসার আগপর্যন্ত তার পরিবার থেকে প্রজনন শিক্ষা বিষয়ক কোনো কথা বলা হয় না। এখনও যদি ১০টি মেয়েকে জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে দেখা যাবে তাদের মধ্যে ৭-৮ জনকেই তার প্রথম পিরিয়ড হবার পর তাকে তার বাসা থেকে পিরিয়ড বিষয়ক কোনো কথা বলা হয়েছে।

তাই যখন এই যৌন নির্যাতনের বিষয়গুলো চলে আসে তখন অধিকাংশ বাচ্চাই এগুলো তার পরিবারের কাউকে বলতে ভয় পায় এবং অনেকাংশে তারা বিষয়গুলো ঠিক বুঝেও উঠতে পারে না। এই সমস্যাটি সমাধানের প্রথম উপায়টি হচ্ছে শিশু অল্প অল্প করে বুঝতে শুরু করার সময় থেকেই তাকে তার শরীর, ‘ভালো স্পর্শ-মন্দ স্পর্শ’ এবং ‘স্পর্শ সুরক্ষা বিধি’ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দিতে থাকা। এখন হয়তো প্রশ্ন চলে আসতে পারে, কীভাবে এত ছোট বাচ্চাদের এত কঠিন কঠিন বিষয়গুলো নিয়ে শেখানো যাবে বা কীভাবে আপনি আপনার বাচ্চাটিকে এ সম্পর্কে শেখানো শুরু করবেন?

তাহলে চলুন ধাপে ধাপে দেখে আসা যাক, কীভাবে আপনি আপনার শিশুকে এ বিষয়ে শেখাতে পারেন।

১) প্রস্তুতি
ক) নিজের জন্য প্রস্তুতি
প্রথমে আপনি আপনার শিশুর সাথে এ বিষয়ে কথা বলার জন্য নিজে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন। ইউটিউব বা অন্যান্য জায়গায় এই বিষয়ে আপনি বিভিন্ন শিক্ষামূলক কন্টেন্ট পাবেন। এছাড়াও এ বিষয়ে বাচ্চাদের জন্য উপযোগী বইও পাওয়া যায়। আপনি সেগুলো দেখে প্রথমে নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে পারেন।

খ) পরিবেশ তৈরি
বাচ্চাকে এ বিষয়ে শেখানো শুরু করার আগে আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে নিতে পারেন। কারণ বাচ্চারা স্বভাবতই কৌতূহলী হয়ে থাকে। তাই যখন আপনি তার সাথে এ বিষয়ে কথা শুরু করবেন, তখন হতেই পারে আপনার বাচ্চাটি পরিবারের অন্য সদস্যদের এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে পারে। তাই আপনার পরিবারের সদস্যদের বাচ্চাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলা নিয়ে যথাযথ ধারণা না থাকলে তারা নিজেরাও বিব্রত হতে পারে, আবার অনেকক্ষেত্রে তারা বাচ্চাটিকে ধমকও দিতে পারে। এ ধরনের পরিস্থিতি উল্টো শিশুর জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই শুরু থেকেই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়ে রাখা ভালো।

গ) কখন বাচ্চাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলা শুরু করার উপযুক্ত সময়?
মূলত শিশু হাঁটতে শেখা এবং পুরোপুরি কথা বলতে শেখার সময় থেকেই তারা অনেক কিছু অনুভব করতে পারে। তারা হয়তো সঠিক শব্দটি বলতে পারে না, তবে অনুভব করতে শিখে যায়। তাই শিশু আপনার কথা বুঝতে শুরু করার সাথে সাথেই বা তার স্কুলে যাবার বয়স হবার সময় থেকে ধীরে ধীরে আপনি আপনার বাচ্চাটির সাথে এ বিষয়ে কথা বলা শুরু করতে পারেন। এরপর তার বয়স বাড়ার সাথে সাথে এবং বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে থাকলে সে অনুযায়ী আপনি তাকে তথ্য দিতে থাকতে পারেন।

২) শরীরের সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোর সঠিক নাম শেখান এবং শরীরের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে শিক্ষা দিন
বেশিরভাগ সময় শিশুরা তাদের সাথে ঘটে যাওয়া যৌন নির্যাতনগুলো সম্পর্কে বলতে পারে না, কারণ তারা তাদের শরীরের গোপন অংশগুলোর সঠিক নামই জানে না। নিজের শরীরের গোপন অঙ্গগুলোর নাম তাদের সঠিকভাবে শেখানো হলে তাদের সাথে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে থাকলে, সেগুলো তাদের পক্ষে সঠিকভাবে বলা সম্ভব হবে এবং তারা এটাও বুঝতে পারবে যে, শরীরের এই অংশগুলো নিয়েও তারা কথা বলতে পারে।

বাচ্চাদের শরীরের গোপন অঙ্গগুলো সম্পর্কে শেখানোর সময়ও সঠিক নামগুলো ব্যবহার করুন। আপনি তাদের এভাবে বলতে পারেন- শরীরের যে অংশগুলোকে সাঁতারের পোশাক দিয়ে ঢেকে রাখা হয়, সেগুলোকে শরীরের গোপন অঙ্গ বলা হয়। শিশুদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের দেওয়া তথ্যের পরিমাণও ধীরে ধীরে বাড়াতে থাকুন।

৩) তার ইচ্ছার বাইরে কেউ তাকে স্পর্শ করতে পারবে না
আপনার শিশুকে শেখান, কে তাকে স্পর্শ করবে এবং কীভাবে করবে এর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তার হাতে রয়েছে। তারা যদি তাকে কোনোভাবে স্পর্শ করা পছন্দ না করে, সেক্ষেত্রে তাদের সরাসরি ‘না’ বলতে শিক্ষা দিন এবং এক্ষেত্রে তাদের ইচ্ছাকে সম্মান করতে শিখুন। এরই সাথে তাদের এটাও শেখান যে, তাদের কোনো ভাই-বোন বা বন্ধুরা যদি তাকে তাদের স্পর্শ করতে নিষেধ করে, তারাও যেন সেকথা শোনে।

আপনার শিশু আপনার পরিবারের কারো কাছে যেতে না চাইলে, তারা চুমু দিতে চাইলে বা জড়িয়ে ধরতে চাইলে যদি সেগুলো পছন্দ না করে, কখনো তাদের জোর করবেন না। পরে শান্ত হয়ে শুনুন, কেন সে কাজগুলো পছন্দ করছে না। এতে করে শিশু তার মতামতের গুরুত্ব বুঝতে পারবে এবং আপনার সাথে তার একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে। আপনার আত্মীয়দেরও জানিয়ে রাখুন যে আপনি আপনার শিশুকে নিরাপদ স্পর্শ এবং সচেতনতা বিষয়ে শেখাচ্ছেন, এতে করে তারা যেন আপনার শিশুটিকে জোরাজুরি না করে।

৪) তিন ধরনের স্পর্শ সম্পর্কে শেখান
ক) নিরাপদ স্পর্শ
এগুলো হচ্ছে সেই স্পর্শ, যা শিশুর জন্য ভালো এবং শিশুকে নিরাপদ রাখে। এই স্পর্শের মাধ্যমে শিশু বুঝতে পারে যে, তার যত্ন নেওয়া হচ্ছে এবং সে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ বোধ করে। জড়িয়ে ধরা, পিঠে বাহবা দেওয়া, কাঁধে হাত রাখা ইত্যাদি নিরাপদ স্পর্শের অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও কোনো ক্ষেত্রে শিশু ব্যথা পায়, এ ধরনের স্পর্শও নিরাপদ স্পর্শের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। যেমন- পা থেকে কাঁটা তোলা, দাঁত তোলা, ইঞ্জেকশন দেওয়া ইত্যাদি। এগুলোও আদতে শিশুকে নিরাপদ রাখার জন্যই করা হয়।

খ) অনিরাপদ স্পর্শ
এগুলো হচ্ছে সে ধরনের স্পর্শ যা শিশুদের শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাত করে (যেমন- থাপ্পড়, ঘুষি, খামচি, লাথি ইত্যাদি)। আপনার শিশুকে শেখান, এ ধরনের স্পর্শ কখনোই প্রযোজ্য নয়। কেউ তাকে এভাবে স্পর্শ করতে পারবে না এবং সে-ও কাউকে এভাবে স্পর্শ করতে পারবে না।

গ) অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ
এই স্পর্শগুলো নিরাপদ এবং অনিরাপদ দুই ধরনেরই হতে পারে। অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ তখনই হবে, যখন শিশুকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্পর্শ করা হবে ব্যক্তিটি তার যত কাছেরই হোক না কেন। আপনার শিশুকে দৃঢ়, কিন্তু ভদ্রভাবে না বলতে শেখানোর অভ্যাস করুন যেন কোনো স্পর্শে সে বিব্রত বোধ করলে সাথে সাথে ‘না’ বলতে পারে। এতে করে তার মাঝে আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে এবং সে নিজের ব্যক্তিগত সীমানা নির্ধারণ করতে সক্ষম হবে, যা তাকে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।

৫) ‘স্পর্শ সুরক্ষা বিধি’ এবং ‘সেফটি সার্কেল’ সম্পর্কে শিক্ষা দিন।
একবার শিশুরা তাদের গোপন অঙ্গগুলোর নাম শিখে গেলে আপনি তাকে এই বিষয়ে ধীরে ধীরে আরো জ্ঞান দেওয়া শুরু করতে পারেন। যেমন, প্রথমে আপনি তাকে ‘সেফটি সার্কেল’ সম্পর্কে শেখাতে পারেন। ‘সেফটি সার্কেল’ হচ্ছে একটি কাল্পনিক বৃত্ত, যার মাধ্যমে আপনি শিশুকে সেখাতে পারেন আপনার শিশুর জন্য নিরাপদ কে কে। ‘সেফটি সার্কেল’-এ কে কে থাকবে, সেটি আপনারা শিশুকে নির্ধারণ করে দিতে পারেন এবং তাকে বলতে পারেন যে, তোমার সেফটি সার্কেলের বাইরে কেউ তোমাকে তোমার ব্যক্তিগত জায়গাগুলোতে স্পর্শ করতে পারবে না। এখন শিশুর সেফটি সার্কেলে শিশুর মা-বাবা, দাদী, খালা, ফুফু বা যে শিশুটির খেয়াল রেখে থাকে, তাকে পরিষ্কার করা, গোসল করানোর কাজগুলো করে থাকে, তারা থাকতে পারে। তবে এ বিষয়ে আগে নিজে সতর্ক হয়ে নিতে হবে, যে তারা আসলেই নিরাপদ কি না।

এরপর শিশুকে কয়েকটি নিরাপত্তা বিধি তার বয়স অনুযায়ী শিখিয়ে দিন। এক্ষেত্রে আপনারা খেয়াল রাখবেন, যখন এ বিষয়গুলো শিশুকে শেখাবেন, তখন খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছেন, এমন পরিবেশ তৈরি করে শিশুটির সাথে এ কথাগুলো বলবেন না। হালকা পরিবেশে, খেলার ছলে, শিশুর সাথে সময় কাটানোর সময় অল্প অল্প করে বিষয়গুলো তাকে শেখাতে থাকুন। ‘স্পর্শ সুরক্ষা বিধি’ হচ্ছে,

কখনো কারো শরীরের ব্যক্তিগত জায়গা স্পর্শ করবে না এবং সেফটি সার্কেলের বাইরের কাউকে তোমার শরীরের ব্যক্তিগত জায়গা স্পর্শ করতে দেবে না।
কেউ যদি তোমার সামনে তার নিজের শরীরের ব্যক্তিগত অংশ স্পর্শ করে অথবা তোমাকে তোমার শরীরের ব্যক্তিগত অংশ স্পর্শ করতে বলে, তাকে সাথে সাথে মানা করে দেবে এবং সেখান থেকে চলে আসবে।
চিকিৎসার প্রয়োজন ছাড়া কেউ যদি তোমাকে তোমার পোশাক খুলতে বলে, কখনো খুলবে না।
কাউকে তোমার পোশাক ছাড়া অবস্থায় তোমার ছবি তুলতে দেবে না এবং কেউ তোমাকে তার পোশাক ছাড়া ছবি দেখাতে চাইলে দেখবে না।
কে তোমাকে স্পর্শ করতে পারবে, চুমু দিতে পারবে এবং জড়িয়ে ধরতে পারবে সেটি নির্ধারণ করার সম্পূর্ণ অধিকার তোমার নিজের আছে। এবং তোমার যদি কিছু পছন্দ না হয়, সেক্ষেত্রে তুমি সাথে সাথে ‘না’ বলতে পার।
৬) সঠিকভাবে ভালো স্পর্শ এবং মন্দ স্পর্শের পার্থক্য শেখান
ভালো স্পর্শ
যাদের আমরা ভালোবাসি এবং আমাদের সেফটি সার্কেলের মধ্যে যারা আছে, তারা আমাদের জড়িয়ে ধরলে বা আদর করলে আমাদের ভালো লাগে। তারা আমাদের যে স্পর্শগুলো করে সেগুলো হচ্ছে ভালো স্পর্শ। যেমন-

যখন ঘুম থেকে ওঠার পর মা তোমাকে চুমু দেয়।
যখন ঘুম পাড়ানোর সময় বাবা চুমু দেয়।
যখন দাদা-দাদী বেড়াতে আসলে সবাইকে জড়িয়ে ধরে আদর করে এবং চুমু দেয়।
খারাপ স্পর্শ
যেসব স্পর্শে তোমার বিব্রত বা খারাপ লাগে, সেগুলোই মূলত খারাপ স্পর্শ। যেমন-

যদি কোনো স্পর্শ তোমাকে ব্যথা দেয়, সেটি খারাপ স্পর্শ।
কেউ যদি তোমাকে শরীরের এমন জায়গায় স্পর্শ করে, যেখানে তুমি চাও না কেউ তোমাকে স্পর্শ করুক।
কেউ যদি তোমার কাপড়ের নিচে স্পর্শ করে বা খোঁচা দেয়, সেটি খারাপ স্পর্শ।
কোনো স্পর্শের কারণে যদি তোমার খারাপ বা বিব্রত অনুভব হয়, সেটি খারাপ স্পর্শ।
কোনো স্পর্শ যদি তোমাকে ভীত করে তোলে, সেটি খারাপ স্পর্শ।
কেউ যদি তোমাকে তাকে স্পর্শ করতে জোর করে, সেটি খারাপ স্পর্শ।
কেউ যদি তোমাকে স্পর্শ করে সে ব্যাপারে কাউকে বলতে নিষেধ করে, সেটি খারাপ স্পর্শ।
কেউ যদি স্পর্শের ব্যপারে কাউকে কিছু বললে তোমার ক্ষতি করার হুমকি দেয় সেটি খারাপ স্পর্শ।
৭) কেউ খারাপ স্পর্শ করলে শিশুর করণীয় কী?
প্রতিটি শিশুকেই ভালোভাবে শেখাতে হবে, তারা যদি এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হয়, তখন তারা কী করবে। এক্ষেত্রে প্রথমেই বাবা-মায়েদের বা শিশুটির কাছের যারা আছেন, তাদের খেয়াল রাখতে হবে- তারা যেন শুরু থেকেই শিশুটির সাথে একটি সহজ এবং সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করে রাখেন, যাতে করে যেকোনো পরিস্থিতিতে শিশু যেকোনো কথা আপনাকে খুলে বলতে পারে। এরপর সে এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে তার কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সেগুলো তাকে গুছিয়ে বলুন।
তাকে বলুন-

তাৎক্ষণিক ভবে ‘না’ বলতে হবে। ব্যক্তিটিকে বলতে হবে যে, কেউ তোমাকে এভাবে স্পর্শ করলে সেটা তুমি পছন্দ কর না এবং এখন তুমি চাইছ না, সে তোমাকে এভাবে স্পর্শ করুক।
ঐ জায়গাটি থেকে দ্রুত সরে আসতে হবে। যার স্পর্শ তোমাকে বিব্রত বোধ করায়, ঐ ব্যক্তিটি থেকে দ্রুত দৌড়ে সরে আসবে। ঐ ব্যক্তিটির সাথে আর কখনোই একা থাকবে না। এবং এ বিষয়ে বাবা-মাকে জানাবে।
আশেপাশে কেউ থাকলে তার কাছে সাহায্য চাইতে হবে। প্রয়োজনে চিৎকার করতে হবে।
নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। মনে রাখবে, তুমি খারাপ কিছু করনি। যে তোমার সাথে এমন করছে, সেই বরং খারাপ।
কেউ যদি তোমাকে খারাপভাবে স্পর্শ করে, তবে তুমি যাকে বিশ্বাস কর এমন কাউকে ঘটনাটি খুলে বল। ব্যক্তিটি তোমাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করলেও তুমি ভয় পাবে না এবং চুপ হয়ে যাবে না।
এমন কোনো ঘটনা গোপন রাখবে না, যা তোমাকে বিব্রত বা খারাপ বোধ করায়।
ঐ ব্যক্তিটি থেকে দূরে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা কর। এমন কারো সাথে একা থাকবে না, যার স্পর্শ তোমাকে বিব্রত বা খারাপ বোধ করায়।
এ তো গেল বাচ্চাদের ভালো স্পর্শ এবং মন্দ স্পর্শ সম্পর্কে শেখানোর কথা। এবার কিছু কথা শিশুদের মা-বাবাদের জন্য। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে যে, কেউ হতে পারে একজন শিশু নির্যাতনকারী। এমনকি ব্যক্তিটি আপনার পরিবারের একদম ঘনিষ্ঠ কেউও হতে পারে। তাই এ বিষয়গুলো নিয়ে বাবা-মাকেই শুরু থেকে সচেতন থাকতে হবে এবং শিশুকেও যতটা সম্ভব বুঝিয়ে বলতে হবে।

অনেক সময় দেখা যায় শিশু তার মা-বাবাকে বিষয়গুলো জানানোর পর তারা লোকলজ্জা এবং সমাজের ভয়ে বিষয়গুলো ধামাচাপা দিয়ে যান। এতে করে তারা যে শুধু তাদের বাচ্চাদের ক্ষতি করেন, তা-ই নয়; একইসাথে তারা সমাজে একটি দানবকে মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াবার সুযোগ দিয়ে যান, যে সুযোগ পেলেই আরো অনেকগুলো শিশুর শৈশবকে ধ্বংস করে দিয়ে যাবে। তাই অভিভাবকদের কাছে অনুরোধ, যদি আপনাদের পরিবারের কোনো শিশুর সাথে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকে এবং আপনি তা জানতে পারেন, তবে দোষীকে শাস্তি দিন, তাকে বিচারের আওতায় আনুন। পৃথিবীকে শিশুদের বাসযোগ্য করতে চাইলে এ ধরনের দানবদের নির্মূল করা অত্যন্ত জরুরি।

Writer: Farhana Haque Flora

Credit: Roar Bangla

Tags:

Leave a Comment

Your email address will not be published.

0
X